প্রশ্ন-১. কয়লা প্রধানত কত প্রকার ও কি কি?
উত্তর : কয়লা প্রধানত চার প্রকার। যথা– ১. পিট কয়লা; ২. লিগনাইট কয়লা; ৩. বিটুমিনাস কয়লা; ৪. এনথ্রাসাইট কয়লা।
প্রশ্ন-২. হাইড্রোফিলিক প্রান্ত কি?
উত্তর : সাবান বা ডিটারজেন্ট আয়নের যে প্রান্ত ঋণাত্বক চার্জযুক্ত এবং পানি কর্তৃক আকর্ষিত হয় তাকে হাইড্রোফিলিক প্রান্ত বলে।
প্রশ্ন-৩. এনথ্রাসাইড কি?
উত্তর : এনথ্রাসাইড একটি উন্নতমানের কয়লা।
প্রশ্ন-৪. ইউরিয়া কাকে বলে?
উত্তর : নাইট্রোজেন ঘটিত সারকে ইউরিয়া বলে।
প্রশ্ন-৫. ইউরিয়ার সংকেত কি?
উত্তর : ইউরিয়ার সংকেত হলো– CO(NH2)2।
প্রশ্ন-৬. ইউরিয়ার IUPAC নাম কী?
উত্তর : ইউরিয়া (H2N – CO – NH2) এর IUPAC নাম ডাই অ্যামিনো মিথানোন।
প্রশ্ন-৭. লাইমের সংকেত লেখ।
উত্তর : লাইমের সংকেত হলো CaO।
প্রশ্ন-৮. কাচের ৩টি বৈশিষ্ট্য লিখ।
উত্তর : কাচের ৩টি বৈশিষ্ট্য হলো– ১. কাচ স্বচ্ছ, ২. কাচ বিদ্যুৎ অপরিবাহী ও ৩. কাচ তাপ কুপরিবাহী।
প্রশ্ন-৯. স্টিম ইঞ্জিনে কোন জ্বালানি ব্যবহৃত হয়?
উত্তর : স্টিম ইঞ্জিন চালাতে কয়লা ব্যবহৃত হয়।
প্রশ্ন-১০. ন্যানো লেয়ার কাকে বলে?
উত্তর : একমাত্রিক (One Dimension) বা রৈখিক বস্তুর কণার পরিসর 1-100nm হলে এদেরকে ন্যানো লেয়ার বলে।
প্রশ্ন-১১. নবায়নযোগ্য জ্বালানি কাকে বলে?
উত্তর : যে সকল জ্বালানির উৎস অফুরন্ত অথবা যে সকল জ্বালানিকে পুনঃউৎপাদন করা যায় তাদেরকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বলে।
প্রশ্ন-১২. BTU এর পূর্ণরূপ কি?
উত্তর : BTU এর পূর্ণরূপ হলো British Thermal Unit।
প্রশ্ন-১৩. ফেল্ডস্পার কাকে বলে?
উত্তর : অ্যালুমিনা, সিলিকা ও ক্ষারকীয় অক্সাইডের মিশ্রণে গঠিত পদার্থকে ফেল্ডস্পার বলে।
প্রশ্ন-১৪. সিমেন্ট কাকে বলে?
উত্তর : সিলিকা, অ্যালুমিনা, লাইম ও আয়রন অক্সাইড এর মিশ্রনকে উচ্চতাপে উত্তপ্ত করলে এক প্রকার চূর্ণাকার পদার্থ পাওয়া যায়, যা জলের উপস্থিতিতে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় পাথরের মতো কঠিন পদার্থে পরিণত হয়। একে সিমেন্ট বলে।
প্রশ্ন-১৫. ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (BTU) কাকে বলে?
উত্তর : এক পাউন্ড পানির তাপমাত্রা এক ডিগ্রি ফারেনহাইট বাড়াতে যে পরিমাণ তাপের প্রয়োজন তাকে ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (BTU) বলে।
প্রশ্ন-১৬. ভালো মানের কয়লা কাকে বলে?
উত্তর : কয়লাতে ফিক্সড কার্বনের পরিমাণ ও এর ক্যালরিফিক মান বেশি হলে এবং সালফার, ছাই, জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম হলে তাকে ভালো মানের কয়লা বলে।
প্রশ্ন-১৭. কয়লার ক্যালরিফিক মানকে কী দ্বারা প্রকাশ করা হয়?
উত্তর : কয়লার ক্যালরিফিক মানকে BTU দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
প্রশ্ন-১৮. প্রাকৃতিক গ্যাস কি?
উত্তর : প্রাকৃতিক গ্যাস হলো এক ধরনের জৈব জ্বালানি যার প্রধান উপাদান মিথেন।
প্রশ্ন-১৯. প্রিজারভেটিভ কাকে বলে?
উত্তর : যেসব উপাদান খাদ্যের সাথে পরিমিত পরিমাণে মিশিয়ে খাদ্যকে বিভিন্ন অণুজীবসমূহের আক্রমণ ও বংশবিস্তার থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় তাদের প্রিজারভেটিভস বা খাদ্য সংরক্ষক বলে।
প্রশ্ন-২০. প্রিটেনিং কি?
উত্তর : কাঁচা চামড়াকে টেনিং উপযোগী করতে যেসব পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় তাকে প্রিটেনিং বলে।
প্রশ্ন-২১. কয়লার ক্যালরিফিযুক্ত মান বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : কয়লার ক্যালরিফিযুক্ত মান বলতে একক ভরের কয়লাকে দহনের ফলে উৎপন্ন তাপশক্তির পরিমানকে বোঝায়। যে কয়লার ক্যালরিফিক মান যত বেশি সে কয়লা তত বেশি উন্নত।
প্রশ্ন-২২. কয়লা ব্যবহারে প্রধান সমস্যা কী?
উত্তর : বাংলাদেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বয়লারে স্টীম উৎপাদনে কয়লাকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে। ফলে প্রচুর পরিমাণে ছাই (ash) উৎপন্ন হয় যাতে CaO থাকে। নদীর পানিতে বর্জ্য হিসেবে পরিত্যক্ত উক্ত CaO পানির সাথে বিক্রিয়ায় Ca(OH)2 এ পরিণত হয়। বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে বা নদীর পানিতে মিশে যাওয়ায় এ ধরনের কয়লা বর্জ্য নদীর ক্ষারকত্ব বৃদ্ধিসহ নদীর ভারসাম্য নষ্ট করে।
প্রশ্ন-২৩. চামড়া পিকলিং করা হয় কেন?
উত্তর : চামড়ায় যুক্ত ক্যালসিয়াম লবণসমূহ দূর করে চামড়াকে ক্রোম ট্যানিং এর উপযোগী করার জন্য পিকলিং করা হয়। পিকলিং করার জন্য চামড়াকে H2SO4 দ্রবণ ও NaCl দ্রবণের মিশ্রণের মধ্যে ডুবিয়ে রাখা হয়। ফলে প্রোটিনের Ca2+ লবণ এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে CaSO4 রূপে অপসারিত হয় এবং প্রোটিনের মধ্যে লিঙ্কেজ সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন-২৪. যান্ত্রিক ড্রায়ারের সুবিধা কি কি?
উত্তর : যান্ত্রিক ড্রায়ারে খাদ্য শুকিয়ে যেসব সুবিধা পাওয়া যায় সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে–
১. শুষ্কীকরণ প্রক্রিয়াটি আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল নয়।
২. শুষ্কীকরণ প্রক্রিয়াকে যথেষ্ট মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করে।
৩. বহুসংখ্যক খাদ্যসামগ্রী শুষ্কীকরণ সম্ভব।
৪. দক্ষতা অনেক বেশি।
প্রশ্ন-২৫. পিট কয়লাকে নিম্নমানের বলার কারণ কি?
উত্তর : কয়লার মান নির্ধারিত হয় তাতে থাকা ফিক্সড কার্বন, সালফার, ছাই, উদ্বায়ী পদার্থ ও জলীয় বাষ্পের পরিমাণের উপর। কয়লাতে ফিক্সড কার্বনের পরিমাণ বেশি হলে এবং অন্যান্য মান সূচকের পরিমাণ কম হলে কয়লার মান ভালো হয়। পিট কয়লাতে ফিক্সড কার্বনের পরিমাণ কম ও অন্যান্য মান সূচকের পরিমাণ বেশি হওয়ায় একে নিম্নমানের কয়লা বলা হয়।
প্রশ্ন-২৬. টিনজাতকরণ কি?
উত্তর : তাপীয় প্রক্রিয়াজাতকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হলো টিনজাতকরণ। টিনজাতকরণ (Canning) হচ্ছে খাদ্য সংরক্ষণের এমন একটি পদ্ধতি যেখানে সম্পূর্ণভাবে বায়ুরোধী করে সিল করা ধাতব পাত্রের মধ্যস্থিত খাদ্য উচ্চ তাপ প্রয়োগ করা হয়। যেকোনো ধরনের পচন বা নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে খাদ্যকে রক্ষা করার জন্য এমন করা হয়। খাদ্য যদি সঠিকভাবে টিনজাতকরণ করা হয় তবে পাত্রের ঢাকনা না খুললে খাদ্য অনেকদিন পর্যন্ত খাওয়ার উপযোগী থাকবে। এমনকি দুই তিন বছর পর্যন্তও থাকতে পারে।
র্তমানে বাংলাদেশে ২৯টি প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্র রয়েছে। প্রথম গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কৃত হয়েছিলো ১৯৫৫ সালে সিলেটের হরিপুরে এবং সর্বশেষ গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কৃত হয়েছিলো ২০১৭ সালে ভোলা, বাংলাদেশে। সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্র হলো তিতাস গ্যাসক্ষেত্র।
প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল উপাদান মিথেন হলেও এর সাথে অল্প পরিমাণ অন্যান্য প্যারাফিন হাইড্রোকার্বন যেমন ইথেন, প্রোপেন, বিউটেন, পেন্টেন, হেক্সেন ইত্যাদি থাকে। এছাড়া আরও থাকে নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড ও হাইড্রোজেন সালফাইড।
প্রাকৃতিক গ্যাসের অনুপাত:-
(a.) মিথেন- ৯৭.৩৩%
(b.) ইথেন- ১.৭২%
(c.) প্রোপেন - ০.৩৫%
(d.) ঊচ্চতর কার্বনের শিকল যুক্ত অংশ- ০.১৯%
(e.) কার্বন ডাই অক্সাইড- ০.০৫%
(f.) অক্সিজেন- ০.০২%
(g.) হাইড্রোজেন- ০.০৩%
(h.) হাইড্রোজেন সালফাইড- ০.০১%
(i.) অন্যান্য- ০.৩%
মোট - ১০০%
85 - 90%
90 - 95%
95 - 99%
100%
মূলনীতি : ক্ষারকীয় ক্রোমিয়াম সালফেট [Cr2(SO4)3] বা ক্রোমিক [H2Cr2O7] এসিডের দ্রবণে চামড়াকে ভিজিয়ে রাখলে চামড়ার মধ্যস্থিত কোলাজেন প্রোটিনের দুটি গ্রূপ অ্যামিন গ্রূপ(-NH2) ও কার্বক্সিলিক গ্রূপ (-COOH) Cr- এর সাথে যুক্ত হয়ে কোলাজেন ক্রোমিয়াম জটিল যৌগ উৎপন্ন করে।
ন্যানো কী? বা এর আকার আকৃতি কতটুকু এই ব্যাপারে একটু ধারণা নেওয়া যাক। অঙ্কের হিসাবে এক মিটারের এক বিলিয়ন ভাগের এক ভাগ হচ্ছে এক ন্যানো মিটার। আরো সহজ করে বলতে গেলে, একটি চুলের চল্লিশ হাজার ভাগের এক ভাগ হচ্ছে এক ন্যানো। একটি ভাইরাসের আকৃতি হয় সাধারণত ১০০ ন্যানোমিটার। ফলে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম এককটিই ন্যানো। ১০টি হাইড্রোজেন পরমাণু পর পর রাখলে, সেটা এক ন্যানোমিটার দৈর্ঘ্যের সমান হয়, যা খালি চোখে দেখা যায় না। অর্থাৎ ন্যানো স্কেলে তৈরি যে কোনো জিনিসই খুব ছোট, খুবই সুক্ষ। আধুনিক ন্যানো টেকনোলজি ১৯৮১ সালে বাস্তবিক অর্থে প্রথম ব্যবহার শুরু হয় যখন পরমাণু নিয়ে নিপুণভাবে মাইক্রোস্কোপের সহায়তায় গবেষণা শুরু হয়। তবে রিচার্ড ফেনমেনকেই এর জনক বলা হয়।
ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করে জিনিসপত্রের শুধুমাত্র আকার আকৃতিই ছোট হচ্ছে না, এর গুণাগুণ বা ধর্ম থাকছে অটুট। এই টেকনোলজি ব্যবহার করে বস্তুটিকে করা হচ্ছে শক্তিশালী, হালকা, আরো সক্রিয় ও টেকসই, বাড়ানো হচ্ছে এর স্থায়িত্ব। আজকাল অনেক বাণিজ্যিক পণ্যই এই ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করে দৈনন্দিন বাজারে প্রচলিত আছে এবং দিনদিন জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ক্ষেত্রবিশেষে এর কিছু কিছু ব্যবহার জেনে নেয়া যাক।
ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার
চিকিৎসা শাস্ত্রে ন্যানোর ব্যবহার : ন্যানো প্রযুক্তি ইতোমধ্যে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। মেডিক্যাল টুলস এর পাশাপাশি চিকিৎসার ধরনেও। এখন রোগ প্রতিরোধে ও রোগ নিরূপণে ডক্টরগণ আরো নিবিড় বিস্তারিত পরীক্ষা করার ব্যবস্থা পাচ্ছেন। ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগে উৎপাদিত ওষুধকে বলে ‘স্মার্ট ড্রাগ’। এগুলোর ব্যবহারে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা যায়। ন্যনো ফাইবার সার্জিক্যাল অপারেশনে চিকিৎসকরা ব্যবহার করছেন। যা শুধুমাত্র অপারেশনকেই সহজ করছে তা কিন্তু নয়, রোগীদের অপারেশন উত্তর জটিলতা থেকেও রেহাই দিচ্ছে। চিকিৎসার প্রয়োজনে আমাদের অঙ্গ-প্রতঙ্গ কেটে ফেলতে হয় আবার কারো কারো জন্মগতভাবেই কোনো বিকলঙ্গ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেই। তাদের জন্য কৃত্রিম অঙ্গ-প্রতঙ্গ বানানো হয়। তবে সেটি হওয়া দরকার নিখুঁত। আর নিখুঁতভাবে তৈরির জন্য দরকার হয় ন্যানো টেকনোলজির।
কৃষিতে ব্যবহার : কৃষিতে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার অপচয় হতে রক্ষা করে। বিশেষ করে বস্ত্র বা গার্মেন্ট শিল্পে তুলা কাপড়ের কাজ শেষে কাপড়ের উচ্ছিস্ট ক্ষুদ্র অংশ (সেলুলোজ) বা তুলা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বানানো হয় কটন বল বা কটন বেটিং। এই কাপড় হয় অনেক টেকসই ও উন্নত। বর্তমানে প্রায় সকল প্রকার উন্নত খাদ্য প্যাকেজিং এ যেখানে বাতাসও প্রবেশ করতে পারে না এ সকল প্যাকেজিংএ ন্যানো ম্যাটেরিয়ালস ব্যবহার করা হয়। আধুনিক জামানায় এটাকে স্মার্ট প্যাকেজিং বলে। এসকল ক্ষেত্রে খাদ্যের মান ভালো থাকে এবং বাইরের আলট্রা ভায়োলেট রেডিয়েশন থেকে খাদ্যকে রক্ষা করে। ন্যানো সেন্সর খাদ্যের রাসায়নিক ও গ্যাসের উপস্থিতি, খাদ্যের পচন ইত্যাদি সনাক্তকরণে ব্যবহার হয়।
পানি বিশুদ্ধ : পানি বিশুদ্ধ করণে নতুন আবিষ্কার ন্যানো ফিল্টার, যা দূষিত পানি দ্রুত ফিল্টার করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে এই ন্যানো ফিল্টার তেলসহ পারদের মতো ভারি ধাতু ছেঁকে ফেলতে পারে। এ ন্যানো ফিল্টার তৈরিতে গ্যালিয়ামভিত্তিক তরল ধাতু অ্যালুমিনিয়ামের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে। এতে অ্যালুমিনিয়াম ডাই-অক্সাইডে দূষিত পদার্থগুলো ধরা পড়ে। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে মলিবডেনাম ডাইসালফাইড সমেত পাতলা পর্দার ফিল্টার আবিষ্কার করেছে সাগরের লোনা পানিকে লোনা মুক্ত করার জন্য।
যানবাহন শিল্পে ন্যানো প্রযুক্তি : ন্যনো প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে যানবাহন নির্মাণের শিল্প কারখানায়, ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নতমানের ব্যাটারি তৈরি করা হচ্ছে যেগুলো খুব দ্রুত চার্জ হয়, খুবই কার্যকরি, ওজনে হালকা এবং দীর্ঘ সময় চার্জ ধরে রাখতে পারে। থার্মোইলেক্টিক ম্যাটারিয়াল ব্যবহার হচ্ছে গাড়ির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে, গাড়ির জ্বালানিতে এডিটিভ হিসেবে ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে।
যানবাহন এর ওজন দিন দিন হাল্কা হচ্ছে পলিমার ন্যানো কম্পোজিট এর ব্যবহারে কাঠামোগত পরিবর্তনের সাথে সাথে। ওজন এর সাথে আছে জ্বালানির সম্পর্ক। বেশি ওজনে জ্বালানি খরচ বেশি। আমেরিকার মহাকাশ সংস্থা নাসার এক গবেষণায় দেখা গেছে বাণিজ্যিক বিমানের ২০% ওজন কমায় ১৫% জ্বালানির সাশ্রয় হয়। ন্যানো মেটেরিয়ালস এর ব্যবহার শুধুমাত্র ওজন এবং জ্বালানিই কমাচ্ছে তা কিন্তু নয় একই সাথে মহাকাশ যানের নির্মাণ খরচ কমাতে পারছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।
ইলেকট্রনিক্স শিল্পে : আমরা ট্রানজিস্টর সম্পর্কে সকলেই অবগত, যা সাধারণত ইলেকট্রনিক সার্কিটে সুইচ হিসাবে বেশি কাজ করে। আমাদের চোখের সামনেই এটি দিন দিন ছোট হছে ন্যানো টেকনোলজি এর বদৌলতে। গত শতাব্দীতেই এটার আকৃতি ছিলো ১৩০ থেকে ২৫০ ন্যানো মিটার। ২০১৪ তে ইনটেল বানালো ১৪ ন্যনোমিটার, ২০১৫ তে আইবিএম বানালো ৭ ন্যনোমিটার এবং তারপর লরেন্স বারক্লে ন্যাশনাল ল্যাব বানালো ১ ন্যানোমিটার। কাজেই এই প্রযুক্তির ব্যবহার বলেই একটি কম্পিউটার এর মেমোরি ক্ষুদ্র চিপের উপর স্টোর করা সম্ভব হচ্ছে। কার্বন ন্যানো টিউব ব্যবহার করে বৈদ্যুতিক তারের রেজিস্ট্যান্স কমিয়ে ইলেকট্রিক গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে যার ফলে পাওয়ার লসও এক্ষেত্রে কম হচ্ছে। বৈদ্যুতিক তার হয়ে যাচ্ছে আগের চেয়ে আরো সুপরিবাহী।
জলবায়ু ও পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে : ন্যানো টেকনোলজি পরিবেশ ভারসাম্য বজায় রাখতেও বেশ কার্যকরি। পরিবেশে দূষিত বাতাস চিহ্নিত করতে এবং তা পরিষ্কার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শিল্প কারখানার দূষিত পানি রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে স্বল্প খরচেই পরিষ্কারকরণের কাজে ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। বাতাসে এবং মাটিতে বিদ্যমান রাসায়নিক বা জৈবিক পদার্থ চিহ্নিত করার জন্য ন্যানো টেকনোলজি সমেত সেন্সর ও সল্যুশন খুবই কার্যকরি হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। সম্প্রতি নাসার বিজ্ঞানীগণ এমন এক সেন্সর ডেভেলপ করেছেন যা ফায়ার ফাইটারগণ আগুনের চারপাশের বাতাসের গুণাগুণ ও তীব্রতা তার সেলফোন দিয়ে মনিটর করতে পারবে।
নির্মাণশিল্পে ন্যানো টেকনোলজি : বিল্ডিং, ব্রিজ, টানেল এর কাঠামোগত বিশুদ্ধতা ও কর্মক্ষমতা মনিটরে তথা ধারবাহিক রক্ষণাবেক্ষণে ন্যানোস্কেল সেন্সর ও ডিভাইস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া বর্তমানে চলমান অত্যাধুনিক যানবাহনসমূহে আধুনিক প্রযুক্তির নামে যা ব্যবহার করা হচ্ছে যেমন- লেন পজিশন সেন্সর দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য, ট্রাফিক জ্যাম এড়ানোর লক্ষ্যে। সর্বোপরি চালকদের গাড়ি চালনা আরো সহজ করার জন্য বিভিন্ন ডিভাইস ও সেন্সর এর ব্যবহার ন্যানো প্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণা থেকেই এসেছে।
ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে?
আমাদের জীবন ব্যবস্থাকে আরো সহজ করার জন্য সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব। বিশ্ব ঝুঁকে পড়ছে ন্যানো প্রযুক্তির দিকে। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন ন্যানো প্রযুক্তির উপর। ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হচ্ছে এখন বিজ্ঞানের গবেষণার বিষয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণায় চলে আসছে এখন মাইক্রো থেকে ন্যানোর দিকে। গোটাবিশ্বকে নিয়ে আসা হচ্ছে আমাদের হাতের মুঠোয়, তেমনি প্রযুক্তি আর পণ্যকেও করে তোলা হচ্ছে সূ²তর ও সহজতর। আকারেও ছোট হচ্ছে, পরিচালনাও সহজ।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাজে ন্যানো প্রযুক্তি খুব বেশি ব্যবহার করা যাবে। ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য কাজে লাগানো যেতে পারে। এছাড়া ন্যানো প্রযুক্তির প্রয়োগ করতে পারলে ওপেন হার্ট সার্জারিতে আসতে পারে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। হৃৎপিন্ডে ব্লক হলে সার্জারি করা হতো কিংবা রিং পরানোর ব্যবস্থা করা হতো, কিন্তু এখন আমরা যদি ধমনীর ভেতর দিয়ে ন্যানো পার্টিকেল প্রবেশ করাতে পারি এবং বায়োসেন্সর দিয়ে বাইরে থেকে সেটা নিয়ন্ত্রণ করি তাহলেই আমরা এই বøকগুলো খুলতে পারি অনায়াসে। দেহে কোনো প্রকার কাটা-ছেঁড়া না করেই সারানো যাবে ক্যান্সারের মতো মারাত্মক ব্যাধি। ভেক্সিনেশন বা টিকার মান উন্নয়নে ন্যানো মেডিসিন তথা ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। সূচের ব্যবহার না করে কিভাবে টিকা দেওয়া যায় তা নিয়ে হচ্ছে গবেষণা। চিকিৎসা বিজ্ঞান এক্ষেত্রে এগিয়েছে অনেক দূর।
ভবিষ্যতে চিকিৎসা শাস্ত্রের সরাসরি ক্যান্সার সেলে ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে সুস্থ টিস্যুগুলোকে সমুহ ধ্বংস হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য গবেষণা চলছে। একই সাথে ক্যমোথেরাপির ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া লাঘবের চেষ্টা চলছে। মানুষের অংগ প্রতিস্থাপন ও টিস্যু বৃদ্ধির উপায় নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। ন্যানো প্রকৌশল এর সহায়তা নিয়ে জীন সিকোয়ন্সিং প্রযুক্তির বিকাশে ব্যাপক অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। ন্যানো প্রযুক্তির সফল প্রয়োগ চিকিৎসা বিজ্ঞান থেকে শুরু করে ইলেক্ট্রনিক পণ্যের ব্যবহার করবে সহজতর।
এত বেশি সুক্ষ ক্যামেরা দিয়ে ছবি উঠবে যা হয়তো চোখেই পড়বে না কারো। ধাতব পদার্থ বিজ্ঞানের যেসব উপাদান ন্যানো প্রযুক্তিতে কাজে লাগানো হচ্ছে সেসব বিষয় নিয়ে হচ্ছে গবেষণা। আর ন্যানো প্রযুক্তির প্রয়োগে খাদ্যশস্যকে করা যাবে আরো কয়েকগুণ পুষ্টিসমৃদ্ধ। হয়তো ন্যানোপুষ্টি সমৃদ্ধ এক কাপ খাবার খেলেই দিব্যি কেটে যাবে সারাটা দিন। বিজ্ঞানীরা এসব সম্ভাবনাকে বাস্তব রূপ দিতেই চালিয়ে যাচ্ছেন বিস্তর গবেষণা।
এ ছাড়া জ্বালানির চাহিদা মেটাতে ন্যানো প্রযুক্তি প্রয়োগের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন বিজ্ঞানীরা। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন রোধেই বিকল্প জ্বালানির সন্ধানে নেমেছে তারা। ফলে এখন ন্যানো জ্বালানিকেই ভাবা হচ্ছে অন্যতম বিকল্প জ্বালানি।
ন্যানো টেকনোলজিতে ব্যবহৃত ন্যানো ডিভাইসগুলো খুব ছোট হবে, কিন্তু ক্যাপাসিটি অনেক বেশি থাকবে। আর কর্মক্ষমতাও হবে তুলনামূলক অনেক বেশি। গতিও থাকবে অনেক, বিশেষ করে যদি ইলেক্ট্রনিক পণ্যের কথা বিবেচনা করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মোবাইল ফোন, আই প্যাড কিংবা কম্পিউটারের কথা। চার যুগ আগেও একটি কম্পিউটার জায়গা দখল করতো পুরো একটি রুম, আর এখন এক হাতেই চলে এসেছে এর আকৃতি। আমরা যদি ন্যানো সোলার সেল ব্যবহার করতে পারি তাহলে এগুলো আরো অনেক ছোট হয়ে যাবে। আস্তো একটা কম্পিউটার ভাঁজ করে পকেটে পুরে চলা যাবে। কথা বলছিলাম এর আকৃতি নিয়ে। ম্যাগনেটিক র্যাম ব্যবহার এর মাধ্যমে আমরা এখন মুহূর্তের মধ্যেই কম্পিউটার বুট করতে পারি। যা করতে ইতোপূর্বে অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে যেতো।
সোলার প্যানেলে স্বল্প খরচে এবং আরো কার্যকরি উপায়ে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করে সূর্যের আলোকে বিদ্যুৎ শক্তিতে পরিণত করা যেতে পারে। এটার তৈরি খরচ কম হবে এবং স্থাপনের খরচও কম হবে। ভবিষ্যতের সোনার প্যানেল বর্তমান প্রচলিত সোলার প্যনেলের ন্যায় শক্ত না হয়ে হবে ফ্লেক্সিবল এবং অনেক হাল্কা। সব মিলিয়ে খরচ হবে অনেক কম।